ডেনাইট ডেস্ক | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯
এক বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। একইসঙ্গে ব্যাংকটিতে প্রত্যেক মাসে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা নতুন করে খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। খেলাপি ঋণ বাড়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের মাধ্যমে অ্যাননটেক্স ও ক্রিসেন্ট গ্রুপের নেওয়া ঋণ বড় ভূমিকা রাখছে বলেও ব্যাংকটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ২০১৮ সালের জুন শেষে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৯ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের জুন শেষে এই ব্যাংকটিতে খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব মতে, ২০১৮ সালের জুন শেষে বিতরণ করা ঋণের ২২ শতাংশ ছিল খেলাপি ঋণ। এক বছর পর অর্থাৎ ২০১৯ সালের জুন শেষে মোট বিতরণ করা ঋণের ৪৩ শতাংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গত এক বছরে (২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত) জনতা ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ১১৫ কোটি টাকারও বেশি। অর্থাৎ প্রতি মাসে ব্যাংকটিতে ৯২৬ কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ অর্থ খেলাপি হয়ে পড়ছে।
এ প্রসঙ্গে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুছ ছালাম আজাদ বলেন, ‘খেলাপি ঋণ বাড়ার জন্য বড় দায়ী অ্যাননটেক্স ও ক্রিসেন্ট গ্রুপ। তবে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। ক্রিসেন্ট, অ্যাননটেক্সসহ অন্যান্য গ্রুপের কাছ থেকে পাওনা টাকা আদায়ের চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তৈরি করা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত জুন মাস শেষে ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এক বছরে বেড়েছে ২৩ হাজার ৮৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে শুধু জনতা ব্যাংকেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। আর বাকি ৫৭ ব্যাংকের খেলাপি বেড়েছে ১১ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৩১ জুন প্রান্তিকে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তাদের কারণে জনতা ব্যাংক এখন খেলাপি ঋণের শীর্ষে। অথচ এক সময় ভালো ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল এই ব্যাংক।’ তিনি বলেন, ‘খারাপ ব্যাংক কর্মকর্তারা খারাপ লোকদের ঋণ দিয়েছেন। ফলে ব্যাংকটি এখন এই অবস্থায় পড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, গত ছয় মাসের ব্যবধানে (জানুয়ারি থেকে জুন) ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে জনতা ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৩৪ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, গত ১৮ মাসে (২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত) ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৫ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৫ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ব্যাংক খাতে যে শীর্ষ ১০০ ঋণ খেলাপি রয়েছে, তার এক-চতুর্থাংশই জনতা ব্যাংকের। এর মধ্যে ব্যাংকের শীর্ষ ২১ গ্রাহকের কাছে আটকে আছে ১৪ হাজার কোটি টাকার মত। বিশেষ করে বিতর্কিত অ্যাননটেক্স আর ক্রিসেন্ট ফুটওয়ার জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকটি থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা নিয়ে আর ফেরত দিচ্ছে না। গত এক দশকে হঠাৎ করেই ফুলে ফেঁপে ওঠা অ্যাননটেক্স গ্রুপ জনতা ব্যাংক থেকে বের করে নিয়েছে পাঁচ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে, ক্রিসেন্ট গ্রুপ চামড়া রফতানির আড়ালে জালিয়াতি করে বের করে নিয়েছে তিন হাজার ৫৭২ কোটি টাকা। ক্রিসেন্ট গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে এরই মধ্যে ব্যাংকটির পুরনো ঢাকার ইমামগঞ্জ ও মোহাম্মদপুর করপোরেট শাখার বৈদেশিক ব্যবসার লাইসেন্স (এডি লাইসেন্স) বাতিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | |
৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ |
১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ |
২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ |
২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |