নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৩ অক্টোবর ২০২০
বিউটি বেগম দেড় বছর ধরে জর্ডানে কাজ করছেন। বাবা পিকুল বেপারী ঢাকাতে কাজ করলেও স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ায় খোঁজ নেন না সন্তানদের। এ অবস্থায় খালার বাসায় আশ্রয় পায় মাহিয়া আক্তার পিংকি (১৩) ও মো. বিপ্লব বেপারী (১০) নামে দুই ভাই-বোন।
কিন্তু কারণে-অকারণে খালার বকাঝোকা মানতে না পেরে পালিয়ে তারা ঢাকা চলে আসে। খুঁজতে থাকে দাদার বাসা। এক পর্যায়ে আশ্রয় জোটে এক রিকশাচালকের বাসায়। পরে ওই শিশু দুটির বাবাকে ছোট একটি এসএমএস পাঠিয়ে ফোন বন্ধ করে দেন রিকশাচালক। ওই এসএমএসের ক্লু ধরে গত সোমবার রাতে তাদেরকে উদ্ধার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি আবদুল্লাহেল বাকী বলেন, শিশু দুটির বাড়ি ফরিদপুরের নগরকান্দা থানার তালমা গ্রামে। বাবা-মায়ের মধ্যে সম্পর্ক ভালো না থাকায় তারা খালার বাসায় থাকতো। কিন্তু কারণে অকারণে খালার বকাঝকা মানতে না পেরে বাসা থেকে পালানোর পরিকল্পনা করে তারা। গত ৯ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসায় যাওয়ার কথা বলে তারা বাসা থেকে পালিয়ে রাজধানীর মেরাদিয়া এলাকায় চলে আসে। উদ্দেশ্য ছিল দাদার বাসায় আশ্রয় নিলে হয়তো আরেকটু ভালো থাকতে পারবে।
কিন্তু শত চেষ্টা করেও দাদার বাসা খুঁজে পায়নি দুই শিশু মাহিয়া-বিপ্লব। একপর্যায়ে গুলশান এলাকায় গিয়ে কান্না করতে থাকে শিশু দুটি। এসময় এক রিকশাচালক তাদের কান্না দেখে মানবিক কারণে আশ্রয় দেন। পরে ওই রিকশাচালক শিশু দুটির কাছ থেকে পিকুল বেপারী ফোন নম্বর নিয়ে ‘আপনার বাড়ি ফরিদপুর না ঢাকা’ লিখে একটি এসএমএস পাঠিয়ে নাম্বারটি বন্ধ করে দেয়। পরে ওই এসএমএসের সূত্র ধরে শিশু দুটিকে ভাটারা এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া সিআইডির সিনিয়র এএসপি আমিনুল হক বলেন, শিশু দুটি বিদেশে পাচার হওয়ার আশঙ্কায় ফরিদপুরের কোতয়ালী থানায় খালা সালেহা বেগমের করা মামলার ২০ দিন পর তদন্তের দায়িত্ব পাই আমরা। ক্লু বলতে শিশু দুটি দাদার বাসা খুঁজে না পেয়ে একটি দোকান থেকে তাদের বাবাকে ফোন করেছিল। ২০ সেকেন্ডের ওই কলে কয়েকবার আব্বু আব্বু বলেও কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে লাইন কেটে দেয় শিশু দুটি।
এরপর তাদের বাবার নম্বরে রিকশাচালক একটি এসএমএস পাঠালে শিশু দুটির সন্ধ্যান পাওয়া যায়। আমাদের ধারণা, ওই রিকশাচালক প্রথমে মানবিক কারণে শিশু দুটিকে তার বাসায় নিয়ে যান। কিন্তু পরে তার মনে হয়তো তাদের পাচার করার চিন্তা আসে। সেজন্য তিনি তার নিজের ফোন বন্ধ করে ফেলেন। আর সম্ভাব্য পাচারের আগেই আমরা তাদের উদ্ধার করি। তবে এখনো কাউকে আমরা আটক করিনি। তদন্তে পাচারের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া পর আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।