নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৬ অক্টোবর ২০২০
রাজধানীর মিরপুর-১ নাম্বারের চিড়িয়াখানা রোডের ‘শাহ হোটেলের’ মালিক মো. রবিউল ইসলাম। করোনার নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে হোটেল পুনরায় চালুর জন্য একজন বাবুর্চির দরকার ছিলো তার। এজন্য গত ৫ অক্টোবর সাবেক কর্মস্থল আশুলিয়া এলাকায় পরিচিতজনদের কাছে বাবুর্চির খোঁজ নিতে যান।
ফেরার পথে নবীনগর এলাকা থেকে নিরালা পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। কিছুক্ষণ পরেই তার সব সর্বস্ব লুটে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। রবিউল দেখলেন, বাস ভর্তি যাত্রী। চিৎকার করলে অন্য যাত্রীরা তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসবেন। এজন্য ধস্তাধস্তিও শুরু করেন। কিন্তু ওই বাসে থাকা ২২ জনই যে ছদ্মবেশী আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য ছিল সেটি বুঝতে পারেননি রবিউল। ফলে ডাকাতদের হাতে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয় তাকে।
এ ঘটনায় ডাকাত দলের প্রধান পটুয়াখালীর বসির মোল্লাসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করার পর এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তার অন্যরা হলো- শেখ হাফিজ, আনোয়ার হোসেন, আমির হোসেন, আল আমিন, জুয়েল, নঈম, তপন ও নাজমুল। এদের মধ্যে গত বুধবার সাভার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার বসির হত্যার ঘটনা বর্ণনা করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সাভার, ধামরাই ও ডেমরা এলাকা থেকে বাকিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করাতে গতকাল আদালতে পাঠানো হয়েছে। জড়িত আরো ৯ জনের পরিচয়ও পেয়েছে পিবিআই। আর বাকি ৪ জনকেও শনাক্তের পর মোট ১৩ জনকে গ্রেফতারের চেষ্টায় আছে পিবিআই।
গতকাল বৃহস্পতিবার পিবিআই সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ডাকাত দলের কয়েকজন রবিউলকে চেপে ধরে কাপড় দিয়ে মুখ বেঁধে ফেলে। এতেও কাজ না হওয়ায় বসির হুইল রেঞ্জ দিয়ে রবিউলকে আঘাত করে। বাসের মধ্যেই মারা যান রবিউল। এরপর নির্জন স্থান দেখে রবিউলের মরদেহ বলিয়ারপুর যমুনা ন্যাচারাল পার্কের পাশে ফেলে চলে যায় ডাকাতরা।
এদিকে বাসায় ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখে রাত ১২টার দিকে রবিউলের মা রেখা বেগম তার মোবাইল ফোনে কল দেন। অপর প্রান্ত থেকে এক অপরিচিত ব্যক্তি ফোন রিসিভ করে জানায়, এই নম্বরের মালিক খুন হয়েছে। তার মরদেহ হেমায়েতপুরে রাখা হবে। এই বলে কল কেটে দেয় ডাকাত দলের সদস্যরা। এরপর রবিউলের মোবাইল ফোনটি ভেঙে ড্রেনে ফেলে দেয় ডাকাত দলের সদস্যরা। পরের দিন সকালে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এরপর তার স্ত্রী হাফিজা মর্গে এসে তার লাশ শনাক্ত করেন।
পিবিআই প্রধান জানান, গত ৪ অক্টোবর ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে নিরালা পরিবহনের একটি বাস ৩০ হাজার টাকার চুক্তিতে ৩ দিনের জন্য ভাড়া করে বসির। পরে নিরালা পরিবহনের স্টিকার তুলে ঢাকা-দৌলতদিয়া-খুলনা লিখে ডাকাত দলের অন্যদের নিয়ে ঢাকা থেকে রওনা হয়। ৪ গরু ব্যবসায়ী ও এক দম্পতিসহ কয়েকজনের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে রাতে দৌলতদিয়ায় অবস্থান করে। পরদিন ৫ অক্টোবর দৌলতদিয়া থেকে ফেরার পথে লঙ্কর রবিউল ইসলামকে বাসে তুলেছিলো ডাকাতরা। ডাকাত দলের প্রধান বাছির ২০ বছর ধরে ডাকাতি করছে। আশুলিয়ায় একটি মামলায় ২৬ মাস জেল খাটার পর এই ঘটনার তিন মাস আগে ছাড়া পায়। মূলত ক্রাইম পেট্রোল দেখে ডাকাতির এ কৌশল রপ্ত করে বাছির। পরিকল্পনা মতো আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ২২ সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে এ কাজে নামে সে।