ডেনাইট ডেস্ক | ২০ অক্টোবর ২০২১
রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) সংকট আর সম্ভাবনার মধ্য দিয়ে পার করেছে ১৬টি বছর।পাঠশালা থেকে কলেজ, কলেজ থেকে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে কালের বিবর্তনে আজকের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বুড়িগঙ্গার তীরে জগন্নাথ রায় চৌধুরীর ১৮৫৮ সালে তৈরি করা পাঠশালাটি ১৯০৮ সালে কলেজে রুপান্তরিত হয়। আর ২০০৫ সালে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৫’ এর মাধ্যমে জাতীয় সংসদে পাশ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বুধবার (২০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়টি তার ১৭তম বর্ষে পদার্পণ করেছে।
মাত্র সাড়ে সাত একরের ছোট্ট এই ক্যাম্পাসে রয়েছে ২০ হাজার শিক্ষার্থীর স্বপ্নবাস। উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি ইতিহাস, ঐতিহ্য ও দেশ-বিদেশে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাফল্য নজর কেড়েছে সবার। নানা প্রতিবন্ধকতার পরও বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য ও একাডেমিক শৃঙ্খলা এখন নতুন সৃষ্টি হওয়া যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য রোলমডেল।
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে একটি নবীন বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর রয়েছে প্রায় ১৫০ বছরের গৌরব ও ঐতিহ্য। এত বছরের ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও জবি দেশের একমাত্র অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়।প্রতিষ্ঠানটির যেমন সফলতা রয়েছে, তেমনি রয়েছে সংকট। তবে দিনে দিনে তৈরি নতুন হচ্ছে সম্ভাবনা।
জবির যত সংকট
জবিকে এখনো অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের লজ্জা বহন করতে হয়। সর্বশেষ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে নিজেদের খেলার মাঠটিও হারালো। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা, ক্লাসরুম সংকট, অবকাঠামোগত সমস্যা, ভূমি সংকট, চিকিৎসাখাতে সংকট, আধুনিক লাইব্রেরির সংকট, শিক্ষার্থীদের গবেষণা খাতে স্বল্প বাজেট, শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগারের পর্যাপ্ত সংকট রয়েছে। অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুঃখ লাঘবে ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত করতে হয়েছিল ‘হল আন্দোলন’। সেই আন্দোলন করতে গিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন অনেক শিক্ষার্থী। এখনো ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে কিছুদিন পরপর হলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের রাজপথে নামতে হয়।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও ট্রেজারার থেকে শুরু করে শিক্ষকদের জন্যও নেই বাসভবন। ছাত্রীদের জন্য একমাত্র যে হলটি বর্তমানে নির্মাণ করা হয়েছে, সেটিও নির্মাণ করতে ১০ বছরের বেশি সময় নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী মেসে, ভাড়া বাসায় থেকে পড়াশোনা করছেন। ব্যয়বহুল ঢাকা শহরের মেস-বাসা-বাড়িতে কষ্টে দিন পার করছেন। প্রতিনিয়ত এই শিক্ষার্থীরা মেসে, ভাড়া বাসায় থেকে মেস বাণিজ্য ও বাড়িওয়ালাদের অসহনীয় আচরণের শিকার হচ্ছেন। এছাড়াও পর্যাপ্ত উপবৃত্তির অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য দরিদ্র শিক্ষার্থী পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন। মেস-বাসায় অসুস্থ হয়ে দিন-রাত পার করছেন অনেক শিক্ষার্থী। আর্থিক টানাপোড়ন ও পারিবারিক চাপে হতাশায় আত্মহত্যার ঘটনাও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফুটে উঠেছে।
জবি সফলতা
এত অপর্যাপ্ততা আর সংকটের মধ্য থেকেও এগিয়ে যাচ্ছে জবি। শত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও পথচলায় জবি দেখিয়ে যাচ্ছে তার সামর্থ্য। এছাড়া অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক ক্যারিয়ারেও ঈর্ষণীয় ফলাফল করছেন জবির শিক্ষার্থীরা। অনেক আগেই ইউজিসির প্রতিবেদনে এ-গ্রেড ভুক্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও দেশের প্রতিটি সেক্টরসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়, প্রাইভেট সেক্টর, বিদেশে উচ্চশিক্ষাসহ সর্বক্ষেত্রে জায়গা করে নিচ্ছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসআই নিয়োগ থেকে শুরু করে বিসিএসসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি চাকরিগুলোতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শুরুর দিকে স্থান দখল করে আছেন।
ক্রীড়াক্ষেত্রেও জবির রয়েছে অসামান্য কৃতিত্ব। বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে স্থান পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ৯ম বাংলাদেশ গেমসে স্বর্ণপদক পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মারজান আক্তার প্রিয়া। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের হাসান আল রাজি চয়ন ও একই বিভাগের মার্জান মারিয়া দম্পতি নতুন প্রজাতির এক ব্যাঙ আবিষ্কার করেছেন, যা সারা দেশে সাড়া ফেলে। সম্প্রতি বিশ্বসেরা গবেষকদের নিয়ে প্রকাশিত এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স ২০২১-এ স্থান পেয়েছেন জবি ২১ শিক্ষক।
সম্ভাবনা
শিক্ষার্থীদের হল আন্দোলনের ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ২০০ কোটি টাকা বরাদ্ধ দিয়েছেন। নতুন ক্যাম্পাসে ভূমি অধিগ্রহণ শেষে এখন সীমানা প্রাচীর তৈরির কাজ চলছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য দাযিত্ব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক সমস্যাসহ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যবর্ধন, শিক্ষার মান বৃদ্ধি, গবেষণাগার স্থাপন, বাজেট বৃদ্ধি ও নতুন ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত শেষ করাসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়ছেন। যেগুলো বাস্তবায়ন হলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি পূর্ণাঙ্গ ও আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি প্রকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ দিতে আমি কাজ করছি। আমরা গবেষণা খাতে গতবারের চেয়ে ডাবল বাজেট দিয়েছি। সেই সঙ্গে লাইব্রেরি, আইসিটি, কম্পিউটার কেনা-এ সকল ক্ষেত্রে বাজেট বাড়ানো হয়েছে। আমি উপাচার্য হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও গবেষণা শিল্প পরিষদের (বিসিএসআইআর) সঙ্গে চুক্তি করেছি, যাতে আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সহজে গবেষণা করতে পারেন। আমরা শিগগিরই পরমাণু শক্তি কমিশন, ঢাবি ও বুয়েটের সঙ্গে চুক্তি করবো।
তিনি আরও বলেন, আমরা করোনাকালীন পরিস্থিতিতে প্রায় অর্ধকোটি টাকা শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার জন্য টিকাকেন্দ্র স্থাপনের ব্যবস্থা করেছি এবং এই কোভিডের সময়েও গত ঈদে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব পরিবহনে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সর্বোপরি যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন হয় এবং এটা একটা পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেয় সেই প্রত্যাশা রেখে ভবিষ্যতে কাজ করে যাবো।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছয়টি অনুষদে ৩৬টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউটে ৬৫৭ জন শিক্ষক, প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী, ৬৬৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে সাতটি শিক্ষাবর্ষে ২১৪ জন শিক্ষার্থী এমফিল ও ৮৭ জন পিএইচডি করছেন।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | |
৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ |
১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ |
২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ |
২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |