| ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য কাজী সিরাজুল ইসলাম ১৯৪০ সালের ১৬ই অক্টোবর ফরিদপুর জেলায় আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নের গড়ানিয়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত কাজী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম কাজী আব্দুল ওয়াহেদ উক্ত ইউনিয়নের দীর্ঘদিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন। কাজী সিরাজুল ইসলাম দুই পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানের জনক। তিনি নারী শিক্ষা বিস্তারে বোয়ালমারী উপজেলা সদরে কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা ডিগ্রী কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ঘোষপুর ইউনিয়নের ইসলামিক শিক্ষার উন্নয়নে রাখালগাছি গ্রামে কাজী সিরাজুল ইসলাম দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ঘোষপুর ইউনিয়নের ইসলামিক শিক্ষার উন্নয়নে রাখালগাছি গ্রামে কাজী সিরাজুল ইসলাম দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। আলফাডাঙ্গা উপজেলা সদরে তিনি দুঃস্থদের চিকিৎসার জন্য কাজী সিরাজুল ইসলাম হোমিও মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। মধুখালী উপজেলায় মহিলা শিক্ষা প্রসারে নওপাড়া ইউনিয়নে আমডাঙ্গা গ্রামে কাজী ফরিদা-সিরাজ বিদ্যা নিকেতন, কামারখালীর আড়পাড়ায় কাজী সিরাজুল ইসলাম নি¤œ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় এবং ডুমাইন ইউনিয়নের জিনিস নগর কাজী সিরাজুল ইসলাম বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। তিনি ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসনে বিপুল ভোটে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
কাজী সিরাজুল ইসলাম নিজ এলাকার উন্নয়নে বহুবিধ প্রকল্প হাতে নেন। ফরিদপুর প্রেস ক্লাব, ডায়াবেটিক সেন্টার, ফরিদপুর জাহিদ মেমোরিয়ল শিশু হাসপাতাল, মুসলিম এতিমখানা থেকে শুরু করে দুস্থ ও গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের নানাভাবে সহায়তা করেন। বোয়ালমারী সরকারি কলেজ, কাদিরদী ডিগ্রী কলেজ, আলফাডাঙ্গা ডিগ্রী কলেজ এবং আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। শুধু নিজ এলাকাতে নয় ঢাকাতেও তিনি বিভিন্ন রকম সমাজসেবামূলক কাজ করেন। ঐতিহ্যবাহী ভিকারুনেছা নুন স্কুলে প্রতি বছর মেধাবী ছাত্রীদের জন্য তিনি স্বর্ণ পদক প্রদান করে আসছেন। এছাড়াও গোপালগঞ্জের কোটালী পাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান কলেজ ও ঢাকার গ্রীণ হেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলেও তার বিশেষ অবদান রয়েছে। অনেক গরীব রোগীকে তিনি নিজ খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। বাংলাদেশের একমাত্র বেসরকারি (বার্ন হাসপাতাল) “সিটি হাসপাতাল” এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কাজী সিরাজুল ইসলাম চট্টগ্রাম শিশু হাসপাতালেও আজীবন সদস্য। এছাড়াও তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি বছর আর্থিক অনুদান ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বৃত্তি প্রদান করে আসছেন।
কাজী সিরাজুল ইসলাম প্রাইম ব্যাংক লিঃ-এর অন্যতম পরিচালক। তিনি বায়তুল মোকাররম ব্যবসায়ী গ্রুপের সাবেক সভাপতি, বনানী কল্যাণ সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এর পৃষ্ঠপোষক, এশিয়ান ওয়াচ লিমিটেডের অন্যতম পরিচালক, বৃহত্তর ফরিদপুর সমিতি ও বাংলাদেশে জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি। তিনি লায়ন্স ক্লাব, লায়ন্স ফাউন্ডেশন ও রেডক্রিসেন্ট এর আজীবন সদস্য। বণিক সমিতিসহ ভূমিহীন কৃষক আর দুস্থ্য মহিলাদের কল্যাণমূলক কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সক্রিয় সদস্য ও পৃষ্ঠপোষক। প্রতি বছর বৃহত্তর ফরিদপুর সমিতি হতে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ২৫,০০০/- টাকা বৃত্তি প্রদান করেন। সমাজ-সেবায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন তাকে মেলভিন জোনস ফেলো নির্বাচিত করেছেন। জনসেবার জন্য ১৯৯৩ সালে তিনি তর্কবাগীশ স্বর্ণ পদকে ভূষিত হন।
এছাড়াও তিনি ১৯৯৫, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে শিক্ষা বিস্তারের জন্য কবি জসীম উদ্দীন স্বর্ণ পদক, মাওলানা আকরাম খাঁ পদক ও সূফী মোতাহার হোসেন স্বর্ণ পদকে ভূষিত হন। বাংলাদেশ জুয়োলারি সেক্টরে অসামান্য অবদানের জন্য জনাব সিরাজুল ইসলামকে দেশের কাগজ বিজনেস অ্যাওয়ার্ড ২০০৬’ প্রদান করেন। এ ধরণের সমাজসেবার জন্য যত অর্থের প্রয়োজন হয়েছে সমস্ত অর্থই তিনি নিজস্ব তহবিল থেকে প্রদান করে আসছেন-
কাজী সিরাজুল ইসলামের এত পরিচয়ের পরেও তার আর একটি পরিচয় আছে। তিনি আমিন জুয়েলার্স লিঃ এর প্রতিষ্ঠাতা। তবে খুব সহজেই তিনি অনেক সম্পত্তির মালিক হয়েছেন তা বলা যাবে না। এর পিছনে রয়েছে কঠিন শ্রম, সততা, আর প্রতিভা। তিনি প্রথম শিরগ্রাম হাই স্কুল এবং ফরিদপুর হাইস্কুল থেকে এস.এস.সি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬২ সালে কাজী সিরাজুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী লাভ করেন। তৎকালীন একটি ব্যাংকের শিক্ষানবীস কর্মকর্তা হিসাবে কর্ম জীবন শুরু করেন। ১৯৬৬ সালে বায়তুল মোকাররম মার্কেটে আমিন জুয়েলার্স নামে নিজেই একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করেন। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। এই প্রতিষ্ঠানে বহ বেকার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে কাজী সিরাজুল ইসলাম বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যকারী হিসাবে বিশেষ অবদান রাখেন। এর জন্য মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে আল-বদর বাহিনী আমিন জুয়েলার্সে হানা দেয়। তারা কাজী সিরাজুল ইসলাম সন্দেহে তার আত্মীয় মো. আফজালকে ধরে নিয়ে যায়্ তবে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। জাতীয় সংসদ সদস্য কাজী সিরাজুল ইসলামের কাজের পরিধি অনেক বিস্তৃত। দেশের একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি হিসাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা সম্পর্কে তার প্রভুত জ্ঞান রয়েছে। কাজী সিরাজুল ইসলাম বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। তিনি তৃণমূল পর্যায় থেকে দেশের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারের লক্ষ্যে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছেন। তাই এলাকার দরিদ্র-পীড়িত মানুষকে কিভাবে টেনে তোলা যায় তা মাথায় রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনায় সে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্তির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিত্তবান হওয়ার পর বেশিরভাগ মানুষই আরো বেশী অর্থের পিছনে দৌঁড়াতে থাকে, তবে কাজী সিরাজুল ইসলাম সে ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তিনি বিত্তবান হয়েও সাধারণ মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তার মতো আরো বিত্তবান ব্যক্তি দেশের বেকার, দুস্থ্য মানুষের পাশে এসে দাঁড়ালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।