নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭
সাংবাদিক উৎপলের পর এবার বাসায় ফিরলেন রাজধানীর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মুবাশ্বার হাসান সিজার। নিখোঁজ হওয়ার ৪৪ দিন পর বৃহস্পতিবার রাতে কে বা কারা তাকে চোখ বাধা অবস্থায় বিমান বন্দর এলাকায় নামিয়ে দিয়ে যায়। পরে তিনি অটোরিকশা যোগে দক্ষিণ বনশ্রীর জে ব্লকের ১২/৩ সড়কে অবস্থিত নিজ বাসায় ফিরে আসেন। নিখোঁজের কারণ সম্পর্কে সম্প্রতি ফিরে আসা সাংবাদিক উৎপলের মতো একই সূরে বলছেন, টাকার জন্যই হয়তোবা তাকে অপহরন করা হয়েছিল।
গতকাল শুক্রবার সকালে নিজ বাসার সামনে মুবাশ্বার সাংবাদিকদের জানান, গত ৭ নভেম্বর বিকেলে আগারগাঁওয়ের ইউএনডিপি ভবন থেকে বের হয়ে উবার নিয়ে রোকেয়া সরণির দিকে যাওয়ার সময় মোবাইলে ব্রাউজ করছিলাম। তখন কয়েকজন লোক গাড়িটা থামিয়ে বলে এটা চোরাই গাড়ি, নামেন। নেমে অন্য গাড়ি খুজার সময় কেউ একজন তার চোখে কিছু একটা মেখে অন্য একটি গাড়িতে তোলে। এরপর একটা কাপড় মুখে ধরলে অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
জ্ঞান ফিরলে দেখেন, একটা রুমে বন্দি, পেছনে হাত বাঁধা। ময়লা একটা তোষক, ঘরের জানালা আছে কিন্তু বাইরে থেকে সিল করা। পাশে আরেকটা রুমে ৪-৫ জনের কথা বলা আওয়াজ পেতাম। হোটেল থেকে এনে ঠান্ডা খাবার দিত খাওয়ার জন্য। আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আমার পরিচিত কেউ আছে কিনা যে টাকা দিতে পারবে। তবে আমার কাছে সরাসরি কেউ টাকা চায়নি। পরিবারের সদস্যদের কাছে চেয়েছে।
মুবাশ্বার বলেন, তারা কনভার্সেশন করছে টাকা-পয়সা নিয়ে। আমার কাছে ২৭ হাজার টাকা ছিল, তা নিয়ে নিয়েছে। তবে একটা জিনিস নিয়ে তাদের মধ্যে বাক-বিতন্ড ছিল আমাকে ছাড়বে নাকি মারবে। তাদের কেউ একজন মিসিং ছিল, ঠিক আমি জানি না, যেটা নিয়ে স্কেয়ার্ড ছিল তারা। তাদের মধ্যে অনেক ধরনের ডিসকাসন হয়েছে। তাদের মধ্যে কোনও একটা ঝামেলা ছিল হয়তো।
ফিরে আসা প্রসঙ্গে মুবাশ্বার বলেন, তার চোখ গামছা দিয়ে বেধে একটি গাড়ির মধ্যে বসায়। এক থেকে দেড় ঘণ্টা একজন কোলে শুইয়ে রেখেছিল তাকে। একসময় নামিয়ে দিয়ে বলে, তুই চলে যা। পেছনে তাকালে মেরে ফেলবো। নেমে দেখি এয়ারপোর্ট রোড। ওখান থেকে একটা সিএনজি নিয়ে বাসায় আসি। আমার কাছে কোনও টাকা ছিল না। সিএনজিওয়ালার ফোন থেকে বাবাকে ফোন দিয়েছিলাম। বাবা গেট খুলে পাঁচশ টাকা নিয়ে এসে সিএনজিওয়ালাকে দেয়। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে মুবাশ্বার বলেন, গতকাল অনেকদিন পর দিনের আলো দেখলাম। সবার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। আমি নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি। মুবাশ্বার ফিরে আসাতেই খুশি পরিবার। তাদের কোনও প্রশ্ন বা কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই বলে জানানো হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে নিখোঁজদের মধ্যে সিজার, উৎপল, অনিরুদ্ধসহ ছয়জন পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন। তাদের মধ্যে ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়ের নামে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, তিনি ব্যবসায়িক প্রতিহিংসার শিকার। আর সাংবাদিক উৎপল বলেছেন, অপহরণকারীরা তার কাছে টাকা চেয়েছিল। মানবাধিকারকর্মীদের অব্যাহত সমালোচনার মুখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সম্প্রতি বলেছিলেন, নিখোঁজদের সন্ধানে তৎপরতা চলছে, ধীরে ধীরে সবাইকে ফিরে পাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড স্যোসিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুবাশ্বার হাসান সিজার গত ৭ নভেম্বর বিকাল থেকে নিখোঁজ ছিলেন। তার খোঁজ জানতে ঢাকার খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তারা বাবা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন মুবাশ্বার। পরে যুক্তরাজ্যে মাস্টার্স ও অস্ট্রেলিয়ায় পিএইচডি করেন তিনি।