নির্মাণাধীন বড় কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বাগেরহাটের রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২০১৮ সালের মধ্যে উৎপাদনে আসার কথা থাকলেও পরে তা পিছিয়ে যায়। রামপালের কেন্দ্রটি ২০২১ সালে জুনে উৎপাদনে আসতে পারে।বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা (ক্যাপটিভসহ) প্রায় ১৬ হাজার মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া মহাপরিকল্পনায় এই উৎপাদন ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াটে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এ বছরই পাবনার রূপপুরে দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার পারমাণবিক কেন্দ্রের মূল স্থাপনার নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, পটুয়াখালী, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ চলছে। এর মধ্যে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধানখালীতে নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির কাজের অগ্রগতি দেখাতে সাংবাদিকদের সেখানে নিয়ে যান প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় এক হাজার একর জমি প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকাতে বালি তুলে প্রকল্প এলাকা সাত মিটার উচুঁ করা হয়েছে। ভূমি উন্নয়ন শেষে এখন চলছে মূল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ। দেড় হাজার বিদেশিসহ প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মী কাজ করছেন সেখানে। প্রকল্পের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রায় ৩১ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে।
আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির সবচেয়ে আধুনিক পাওয়ার প্ল্যান্টের কাজ চলছে এখানে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় ২০১৪ সালে বাংলাদেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) মধ্যে যৌথ উদ্যোগের চুক্তি হয়। পরে গঠিত হয় বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। যৌথ উদ্যোগের ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় পায়রার এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের দায়িত্বে আছে চীনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এনইপিসি ও সিইসিসি কনসোর্টিয়াম।
প্রায় ১২ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের উৎপাদন শুরু হবে ২০১৯ সালের এপ্রিলে; ছয় মাস পর অক্টোবরে চালু হবে দ্বিতীয় ইউনিট। নির্মাণ ব্যয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ ঋণ দেবে চীনের এক্সিম ব্যাংক ও চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। এ কেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ঠিক করা হয়েছে ৬ টাকা ৬৫ পয়সা। বিপু জানান, এ কেন্দ্রের জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানির পরিকল্পনা করা হয়েছে। কয়লা নামানোর জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিজস্ব জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া পায়রা বন্দরও এক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছেই রামনাবাদ চ্যানেলে চলছে পায়রা বন্দর নির্মাণের কাজ, যেটিকে গভীর সমুদ্র বন্দরের রূপ দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বন্দরের পাশাপাশি পায়রাতে মোট নয় হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার নয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে আগামী পাঁচ বছরে। এজন্য বিনিয়োগ করা হবে ১২ বিলিয়ন ডলার। পায়রায় হবে বাংলাদেশের অন্যতম বড় বিদ্যুৎ হাব।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কথা চিন্তা করেই এখানে ব্যাপক উন্নয়নের কাজ শুরু করেছেন।
পদ্মা সেতু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রায় ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা তৈরি হবে। পায়রায় আরেকটি প্রকল্পে কয়লার পাশাপাশি আমদানি করা এলএনজি দিয়েও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। ১০০ একর জমিতে ৩৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ইতোমধ্যে জার্মানির সিমেন্স এজির সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে সই করেছে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি।নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএম খোরশেদুল আলম বলেন, পায়রায় এখনকার কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে এর দ্বিতীয় ফেইজের কাজ শুরু হবে।
সেটার উৎপাদন ক্ষমতা ১৩২০ মেগাওয়াট হবে। প্রতিমন্ত্রী জানান, পটুয়াখালীর পায়রা ছাড়াও কক্সবাজারের মাতারবাড়ি ও মহেশখালীতে ‘বিদ্যুৎ হাব’ গড়ে তুলতে সরকার কাজ শুরু করেছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে ১২ হাজার ৩৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৬টি কেন্দ্র বর্তমানে নির্মাণাধীন। আরও সাত হাজার ৩৭৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৪১টি কেন্দ্র নির্মাণের দরপত্র রয়েছে প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া নয় হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ১৪টি প্রকল্প রয়েছে সরকারের পরিকল্পনায়।