নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭
শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা শাখার বিষয়াবলীর পাশাপাশি খেলাধুলা, রাজনীতি ও সমকালীন বিজ্ঞান, দর্শন আর লোকসংস্কৃতির উপর রচিত লক্ষাধিক বইয়ের সংগ্রহ নিয়ে রাজধানীতে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে নতুন বইঘর ‘বাতিঘর’।বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের অষ্টম তলায় ৫০০০ বর্গফুট নিয়ে নির্মিত হয়েছে এই নতুন বইঘরটি। শুক্রবার সকালে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
আজ বুধবার দুপুরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বাতিঘর’ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন এর পরিচালক দীপঙ্কর দাশ। এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম। অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ‘বাতিঘর’ প্রসঙ্গে বলেন, আমি যখনই চট্টগ্রামে যাই, তখন তিন চার ঘণ্টা বাতিঘরে গিয়ে বসে থাকি। সেখানে আমার সমবয়সী বা আমার চেয়ে কিছু কম বয়সী মানুষ এসে আড্ডা দেন। আড্ডাই তো সব সৃজনশীলতার উৎস।
রুচিশীল, বুদ্ধিজীবী যে মানুষগুলো এখানে আসছে, দীপঙ্কর তাদের রক্তের আকুতিটা ধরে ফেলেছে। ঢাকায় তারা যাত্রা শুরু করেছে। মনমুগ্ধকর এই বইঘরে এখন মান ধরে রাখতে হবে। দীপঙ্কর দাশ জানান, ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে যাত্রা শুরু করা বাতিঘর এবার ঢাকায় তাদের দ্বিতীয় শাখাটি উদ্বোধন করতে যাচ্ছে। ২০০৯ সালে প্রকাশনা সংস্থা হিসেবে যাত্রা শুরু করে বাতিঘর। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ভবনে তিন হাজার বর্গফুটের বড় পরিসরে পুরনো জাহাজের আদলে সম্প্রসারিত হয় বাতিঘর।
তিনি জানান, তাদের ঢাকা শাখায় প্রায় শতাধিক বিষয়ের ১০ হাজার লেখক ও এক হাজার দেশি-বিদেশি প্রকাশনা সংস্থার লক্ষাধিক বইয়ের বিষয়ভিত্তিক বৈচিত্র্যপূর্ণ সংগ্রহ থাকবে। ভ্রমণ, বাংলা ও বাঙালি, ও বিশ্ব সভ্যতার বিকাশ, ইতিহাস, সমাজচিন্তা, রাজনীতির নানা বিষয় নিয়ে সাজানো হয়েছে ভ্রমণ ও প্রবন্ধ কর্নারটি। যারা কবিতা ভালোবাসেন, তাদের জন্য রয়েছে কবিতা কর্নার।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, সুফিয়া কামাল, শামসুর রাহমান, আসাদ চৌধুরীসহ বাংলার শত কবির কাব্যগ্রন্থ পাওয়া যাবে এখানে। দর্শন বিষয়ক নানা প্রবন্ধ, সংকলন, প্রকাশনা নিয়ে সাজানো হয়েছে দর্শন কর্নার।
বাংলা সাহিত্যের তিন আলোচিত সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও সমরেশ মজুমদারের রচনাবলী সাজানো হয়েছে শীর্ষেন্দু-সুনীল-সমরেশ কর্নারে। সংকলনের পাশাপাশি আলাদাভাবে পাওয়া যাবে তাদের রচনা। যারা ছোট গল্প পড়তে ভালোবাসেন, তাদের জন্য জননন্দিত গল্পকার, কথাসাহিত্যিকদের রচনাবলী নিয়ে সাজানো হয়েছে ছোটগল্প কর্নার। লোকসংস্কৃতি, ইতিহাস গবেষকদের জন্য এখানে রয়েছে লোকসংস্কৃতি, চলচ্চিত্র, থিয়েটার, শিল্প ও স্থাপত্য, ইতিহাস কর্নার।
বইঘরে আরো রয়েছে, সাংবাদিকতা, রাজনীতি, বিজ্ঞান ও গণিত,খেলাধুলা, কল্পবিজ্ঞান, রম্য রচনা, রহস্যগল্প কর্নার। তরুণ প্রজন্মের অন্যতম প্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের গল্প, উপন্যাস, রহস্য উপন্যাস নিয়ে সাজানো হয়েছে ‘মুহম্মদ জাফর ইকবাল’ কর্নার। দীপঙ্কর দাশ বলেন, “আমরা বরাবরই বাছাই করা বই আমাদের সংগ্রহশালায় রাখি। তারপরও যদি মনে হয়, বুক শেলফের কোনো বইয়ের প্রতি পাঠকদের আগ্রহ একেবারেই নেই, তবে আমরা সেই বইটি আর বুক শেলফে রাখি না। ঢাকার ‘বাতিঘর’- এ বই নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা আরো বেশি লক্ষ্য রাখব।
তিনি জানান, ৫০০০ বর্গফুটের বাতিঘর নির্মিত হয়েছে ঢাকার লালবাগ কেল্লার আদলে। প্রবেশ পথ, বইঘরের মেঝে, খিলান, বইয়ের তাক, শিশুদের কর্নার, সেলস কর্নার সবকিছুতেই থাকছে মুঘল স্থাপত্যের নিদর্শন। প্রবেশপথটি সাজানো হয়েছে মুঘল স্থাপত্য বড় কাটারার মতো করে। মেঝেতে দেওয়া হয়েছে রেড স্যান্ড স্টোন ও মার্বেল। এখানে এসে পাঠকরা তাদের পছন্দের বই নিয়ে পড়তে পারবেন বইঘরে বসেই। তাদের জন্য চেয়ারগুলো সাজানো হয়েছে মুঘল রীতি অনুযায়ী। যে পেয়ালায় চা আসবে, তাও নির্মিত হয়েছে মুঘল রীতির কারুকার্যে।
বাতিঘরে রয়েছে একটি ছোট্ট মঞ্চ, যেখানে বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান করা যাবে। মঞ্চটি নির্মিত হয়েছে লালবাগ কেল্লার পরীবিবির মাজারের আদলে। লাল ইটের দেয়ালের মতো সাজানো হয়েছে বইঘরের দেয়াল। সেলস কর্নারটি সাজানো হয়েছে ফতেহপুর সিক্রির মতো করে, যেখানে বসে গান করতেন সংগীতজ্ঞ তানসেন। শিশু কর্নারটি সাজানো হয়েছে কাচ ও কাঠ খোদাইয়ের বাহারি নকশায়। দীপঙ্কর জানান, ‘বাতিঘর’ থেকে একসঙ্গে পাঁচ হাজার টাকার বই কিনলে দেওয়া হবে একটি প্রিভিলেজ কার্ড। এই কার্ডটি দিয়ে গ্রাহক এক বছর বই কেনায় মূল্য ছাড় পাবেন। তবে গ্রাহকরা এখান থেকে কোনো বই বাসায় নিয়ে গিয়ে পড়তে পারবেন না।বইঘরে এছাড়াও থাকছে লিটল ম্যাগাজিন, সাহিত্য সাময়িকী কর্নার, ক্যাফে।