নিজস্ব প্রতিবেদক | ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭
মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও উচ্ছৃঙ্খলা রোধে ইংরেজি নববর্ষ থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে রাজধানী জুড়ে কড়া নিরাপওা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে নগরীর বিভিন্ন প্রবেশপথে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। এছাড়াও আজ শনিবার থেকে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের সমন্বয়ে গঠিত নিরাপত্তা তল্লাশী, ডগ স্কোয়াড, বোম্ব ডিসপোসাল ইউনিট, সোয়াট টিম ও এসবির সুইপিং টিম মোতায়েন করা হবে।
অনুষ্ঠানটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবে উদ্যাপন নিশ্চিত করতে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা হতে রবিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সব ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্য, আতশবাজি, পটকাবাজি, অন্যান্য ক্ষতিকারক ও দূষণীয় দ্রব্য বহন এবং ফোটানো নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। তবে ঢাকা মহানগরীর নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে এ সকল নির্দেশনা মেনে চলার জন্য নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মো.আছাদুজ্জামান মিয়া।
এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর রমনার বাংলাদেশ পুলিশ অফিসার্স মেসে ঢাকা মেট্রোপলিটন শ্যুটিং ক্লাবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন উপলক্ষে উন্মুক্ত স্থানে সভা-সমাবেশ, গান-বাজনা-অনুষ্ঠান ও আতশবাজি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে ঘরে মধ্যে সব আয়োজন করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাদক দ্রব্যের ব্যবহার না হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। ইতিমধ্যে ওইদিন সব বার বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। থার্টি ফার্স্ট উপলক্ষে উন্মুক্ত স্থানে কোনো অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হবে না।
দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং জানমালের নিরাপত্তার কথা ভেবেই উন্মুক্ত স্থানে না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা কিছু হবে সব ঘরের মধ্যে। সম্প্রতি বিজিবি সদর দফতর পিলখানায় সীমান্ত সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায়, মাদক চোরাচালানে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সভায় তিনি বলেন, পুলিশ, র্যাব কিংবা জন প্রতিনিধি যেই হোক, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। যার বিরুদ্ধেই মাদক চোরাচালানের অভিযোগ পাওয়া যাবে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আগামী ৩১ ডিসেম্বর থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনকালে মাদকদ্রব্য পাচার, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও মাদক সংক্রান্ত অপরাধ যাতে সংঘটিত না হয় সে জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশেনা দিয়েছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। পাশাপাশি ২৪ ঘন্টা বন্ধ থাকবে রাজধানীর সকলবার। আজ রাত থেকে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বারিধারা,বনানী, উত্তরা, ধানমন্ডি,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পথে পথে চেকপোস্ট ও তল্লাশি চালানো হবে।
থার্টিফাস্টের রাতে যে কোন ধরনের বিশৃংখলা ঠেকাতে বার গুলো সাময়িক বন্ধ করে দেয়া হবে। অপর দিকে থার্টিফাস্ট নাইটে ২০১৮ সালকে বরণ করে নিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও নানা আয়োজন করা হচ্ছে। পুলিশ জানায়, থার্টিফাস্ট উদযাপনকালে দেশের সার্বিক আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাকি রাখতে অবৈধ মাদকদ্রব্য বিক্রি ও বিভিন্ন মাদক স্পট চিহ্নিতসহ মাদক বিরোধী অভিযান চলছে।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীতে পৃথক অভিযান চালিয়ে ৭৬৩ বোতল বিদেশি মদ জব্দ করে র্যাব। যার মধ্যে ৫৪৩ বোতল বিয়ার রয়েছে। এ সময় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাসেম বলেন, বৃহস্পতিবার ভোর রাতে রাজধানীর গুলশান-১ এর ১১১নং রোড থেকে বিদেশি মদ ও বিয়ারসহ দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, রফিক ও জহির।
এসময় তাদের কাছ থেকে ২২০ বোতল বিদেশি মদ ও ১৬০ বোতল বিয়ার জব্দ করা হয়। অন্যদিকে পুরান ঢাকার আরমানিটোলা উষা ক্রীড়া চক্রের সামনে প্রাইভেটকার থেকে ৩৮৩ ক্যান বিয়ারসহ আবু তাহের নামে এক প্রাইভেটকার চালককে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০। র্যাব-১০ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মঞ্জুর মোর্দেশের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার দুপুরে এ অভিযান পরিচালিত হয়। তিনি জানান, প্রাইভেটকারে ১৬ কেইসের ভেতরে এসব বিয়ার ছিল। বিয়ারগুলো বেলজিয়ামে তৈরি। বাংলাদেশি টাকায় এর মূল্য প্রায় ৩ লাখ ৬ হাজার টাকা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তারা জানায়, থার্টিফাস্ট নাইটে নিরাপত্তায় পুলিশের উধ্বর্বতন কর্মকর্তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা, গুলশান-১ ও ২ এবং বারিধারা, বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন স্পট গুলোতে নিরাপত্তা তদারকি করবেন। আর বেপরোয়া গাড়ি চালানো ঠেকাতে ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। এছাড়াও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন মেট্রোপলিটন এলাকা, পর্যটন জেলা কক্সবাজার,কুয়াকাটা,সিলেটের বিভিন্ন স্পটে থার্টিফাস্ট পালন করতে যাওয়া হাজার হাজার পর্যটক যাতে নিরাপদে থার্টিফাস্টের আনন্দ উপভোগ করতে পারে তার জন্য পোশাকে ও সাদা পোশাকে আইন শৃংখলা বাহিনী মোতায়েন করা হবে।
এছাড়াও সার্বিক নিরাপত্তায় কন্ট্রোল রুম এবং আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়নে বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করা হবে। নিরাপত্তায় পুলিশ-র্যাবের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের টিমও থাকবে। গতবারের মত এবারও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, সব প্রবেশ পথে ও কৌশলগত স্থানে ইলেক্ট্রনিক্স তল্লাশি (আর্চওয়ে) ব্যবস্থা, বোম ডিজপোজাল টিম,ডগস্কয়ার্ড, ভিডিও ক্যামেরা স্থাপনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
গোয়েন্দা সুত্র জানান,রাজধানীর কোথাও উন্মুক্ত স্থানে ইংরেজি নববর্ষের অনুষ্ঠান করতে দেব না। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেখানে পুলিশ বাধা দেবে না। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় বাসিন্দারা ছাড়া বাইরের কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। ৩১ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নগরবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে আনন্দ উৎসব করবে। আগে এ দিনের অনুষ্ঠানে উৎসবের নামে উচ্ছৃঙ্খল কর্মকান্ড দেখা যায়। তাই সন্ধার পর উন্মুক্ত স্থানে কোনো অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হবেনা।
এক জায়গায় অনেক ব্যক্তি জমায়েত হতে পারবেন না। সন্ধা ৬টার পর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী ও বারিধারায় বাসিন্দা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আবাসিক হলের ছাত্রছাত্রীরা ছাড়া অন্যদের ঢুকতে দেয়া হবে না। সব প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসানো হবে। এসব এলাকায় লোকদের সন্ধার আগে ফিরতে হবে। হাতিরঝিল এলাকায় বিকাল থেকে মানুষ ও যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। রাজধানীতে বেপরোয়া গাড়ি চালানো প্রতিরোধেও বিশেষ যন্ত্র বসানো হবে। বাণিজ্যিক বারগুলো সন্ধ্যা ছয়টার আগে বন্ধ করে দেয়া হবে। এরপর কোনো বার খোলা রাখা যাবে না। এবার দেহ তল্লাশির অংশ হিসেবে নতুন এক ধরনের ক্যামেরাও রাখা হবে।
ডিএনসির ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলের সহকারি পরিচালক (উত্তর) বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইটে কোনো হোটেল, রেস্তরা, আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে আয়োজিত ডিজে পার্টি বা অনুষ্ঠানে কেউ বিয়ার, ইয়াবাসহ কোনো মাদকদ্রব্য গ্রহণ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি মদ খেয়ে কেউ রাস্তাঘাটে মাতলামি/উচ্ছৃঙ্খলা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে তরুণ-তরুণীই উš§াতাল কিংবা উচ্ছৃঙ্খলা করে থাকে। তাই এসব কর্মকান্ড থেকে তাদের বিরত থাকার অনুরোধ জানান তিনি।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) বলেন, থার্টিফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশে মাদক পাচার, মাদক দ্রব্যের অপব্যবহার ও মাদক সংক্রান্ত অপরাধ দমনে ডিএনসিসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুধু যে উৎসবকে কেন্দ্র করেই মাদকের অপব্যবহার বৃদ্ধি পায় এমনটি নয়। সাধারণত এসব উৎসবের প্রায় ২ মাস আগে থেকেই মাদক দ্রব্য মজুদ শুরু। তবে এবার শক্তভাবে মাদক পাচার ও মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধে ইতিমধ্যে অভিযান চলছে।
জানা গেছে,রাজধানীতে কয়েক স্তরের নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হয়েছে। থার্টিফার্স্ট নাইটে নগরবাসীর নিরাপত্তায় মাঠে থাকবে পুলিশ-র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১২ হাজারের বেশি সদস্য। থাকবে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্পটে চেকপোস্ট ও ব্লক রেড। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ধ্যার পর বহিরাগত কোনো ব্যক্তি বা যানবাহন প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা শুধু আইডি কার্ড দেখিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবেন।
ডিএমপি’র ডিসি (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান জানান, থার্টিফার্স্ট নাইটকে ঘিরে রাজধানীতে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে থাকছে টহল, সিসিটিভি ও চেকপোস্ট। বিশেষ নজরদারিতে থাকবে অভিজাত হোটেল ও ক্লাব। যে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
র্যাব’র আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, থার্টি ফার্স্ট নাইটে যাতে কোনো অনভিপ্রেত ঘটনা না ঘটে সেজন্য র্যাব সতর্ক রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে থাকবে র্যাবের চেকপোস্ট। থাকছে র্যাবের ডগ স্কোয়াডও। সক্রিয় থাকবে র্যাবের পেট্রল টিম ও মোবাইল টিম। ইতোমধ্যে কূটনৈতিক এলাকাসহ রাজধানীর প্রবেশ পথগুলোতে বিশেষ নজরদারি শুরু হয়েছে।