এ প্রকল্প আর এগোবে কি না- তা নিয়েই এখন সন্দিহান এর উদ্যোক্তা ও বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। দুই বছর আগে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১টি ‘ইউ-টার্ন’ নির্মাণের এই উদ্যোগ নেন উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক।
সাতরাস্তা, কোহিনূর কেমিকেল মোড়, মহাখালী বাস টার্মিনাল, মহাখালী ফ্লাইওভার, বনানী চেয়ারম্যানবাড়ি, বনানী কবরস্থান, বনানী ওভারপাস, শ্যাওড়া, কাওলা, উত্তরার র্যাব-১ অফিসের সামনের সড়ক এবং জসিম উদ্দিন সড়কের সামনে এই ইউ-টার্নগুলো নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়।
বৃহস্পতিবার সাতরাস্তা, তেজগাঁও, মহাখালী এবং বনানী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পের কোনো কাজই হচ্ছে না। এসব জায়গায় প্রকল্পের সাইনবোর্ড থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাউকে দেখা যায়নি। তবে উত্তরার র্যাব-১ অফিসের সামনে এবং রাজলক্ষ্মী এলাকায় দুটি নির্মাণ কাজ চলছে।
কাজের অগ্রগতি জানতে চাইলে প্রকল্পের পরিচালক মো. মাহবুব আলম বলেন, ঠিকাদারকে বলে কাজ বন্ধ রেখেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত জমি বুঝে পাইনি। কবে পাব তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। এ অবস্থায় ঠিকাদারকে কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি। সে কাজ করলে পরে তার বিল দেব কোথা থেকে। এটা নিয়ে একটা জটিলতা তৈরি হতে পারে।
সিটি করপোরেশনের এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ১ দশমিক ৩৬ একর, বাংলাদেশ রেলওয়ের দশমিক ২২ একর, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের দশমিক শূন্য নয় একর এবং জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের দশমিক শূন্য ছয় একর জমি ব্যবহারের প্রয়োজন পড়বে।
উত্তরের প্যানেল মেয়র মো. ওসমান গণি বলেন, প্রকল্পের শুরুতে জমি দিতে আপত্তি না করলেও সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো এখন ঝামেলা করছে। আনিসুল হক সাহেব থাকতে উনারা আমাদের বলেছিলেন তাদের জমি আমরা ব্যবহার করতে পারব। আমরা ইউ-টার্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সব প্রক্রিয়া শেষ করেছি। ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়ার পর সে কাজও শুরু করেছে। কিন্তু এখন উনারা বলতেছেন জমি কিনে নিতে হবে।
আমরা তো জমি কিনে নিতে পারব না। আমাদের তো এত ফান্ড নাই। এ বিষয়টি তুলে ধরে সড়ক বিভাগের সচিবকে একটি চিঠি দিলেও আশাবাদী হতে পারছেন না জানিয়ে প্যানেল মেয়র বলেন, মনে হয় না তারা পজিটিভ।১১টি ইউ-টার্ন প্রকল্পের জট্লিতা নিয়ে গত ৩০ নভেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে আরেকটি চিঠি দিয়েছিল সিটি করপোরেশন। সেখানে বলা হয়, বিভিন্ন সংস্থার জমি হস্তান্তর/ব্যবহারের অনুমতি না পাওয়ায় কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
মাঠপর্যায়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সংস্থাগুলোর অসহযোগিতার কারণে ইউ-টার্ন নির্মাণ বন্ধ রয়েছে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মহোদয় মারা যাওয়ার দুই-তিন দিন আগে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এসেছিলেন। সে সময় আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আমরা তাদেরকে বলেছিলাম একটি প্রস্তাব নতুন করে পাঠাতে। নতুন করে প্রস্তাব যদি এসে থাকে তাহলে সেটা আমরা দেখব।
তবে সড়ক ও জনপথ জমি কিনে নেওয়ার কথা বলেনি। হয়ত ক্ষতিপূরণের কথা বলতে পারে।এ প্রকল্পের ব্যয়ের ২৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকার মধ্যে ১৯ কোটি ৮৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা সরকারের দেওয়ার কথা। আর বাকি ৪ কোটি ৯৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগানোর কথা। এসব ইউ টার্ন নির্মাণের জন্য ২০১৫ সালের শেষ দিকে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠায় উত্তর সিটি করপোরেশন।
সেখানে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে কাজ শুরু করে ২০১৭ সালের জুনে শেষ করার কথা থাকলেও অনুমোদন পেতেই এ বছরের ২৭ মার্চ পেরিয়ে যায়।এরপর প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গত ২৯ অক্টোবর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এসএম কনস্ট্রাকশনসকে কার্যাদেশ দেয় সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। নভেম্বরের শুরুতে ঠিকাদার কাজ শুরু করলেও জমি না পাওয়ায় নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এরপর দুই মাসেও কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় এখন পুরো প্রকল্পটিই অনিশ্চয়তায় পড়েছে।