নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৫ জানুয়ারি ২০১৮
প্রতিদিনের মতো বুধবার সকাল ১১টার দিকে স্কুল থেকে বাসায় ফিরে আসে ১ম শ্রেণির ছাত্র নাহিন আহমেদ। এরপর বাসার সামনে নিজের বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করছিলো সে। সেখান থেকে প্রতিবেশি মশিউর (১৮) তার সঙ্গে ক্রিকেট খেলার কথা বলে বসুন্ধরা এলাকার একটি মাঠে নিয়ে যায়। কিন্তু ব্যাটিং করতে গিয়ে শত চেষ্টার পরেও বল ব্যাটে লাগাতে পারছিলোনা নাহিন। পারবে কিভাবে তার বয়সতো মাত্র ৭। ভালো করে ব্যাট ও ধরতে শেখেনি সে।
তাতে কিছু আসে যায়না মশিউরের। রান কেন করতে পারলোনা এটাই নাহিনের অপরাধ। তাইতো খেলা শেষে ক্ষোভে ইট দিয়ে নাহিনের মাথা থেতলিয়ে মর্মান্তিক ভাবে খুন করে মশিউর। পরে লাশটি বাড্ডার আফতাব নগরের একটি কাশবনে ফেলে যায় সে। গত বুধবার রাতে নাহিনের লাশ উদ্ধার করে মশিউরকে গ্রেফতারের পর এভাবেই হত্যার স্বীকারোক্তি দেয় সে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার এসআই আবদুল করিম জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরেই মশিউরকে গ্রেফতার করা হয়। আজ সে বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করেই সে নাহিনকে হত্যার পথ বেছে নেয়।
এদিকে নিহত শিশু নাহিনের পরিবার অভিযোগ ৭ বছর বয়সী এক শিশু বড়দের সঙ্গে ক্রিকেট খেলবে এটা মানা যায়না। তাছাড়া মশিউর বসুন্ধরার মেহেদি মাঠের কথা বলছে যেটা মূলত রাস্তা। কাদের সঙ্গে খেলছিলো সেটাও বলছে না। তাদের অভিযোগ, মশিউর অপহরণ কিংবা পাচার করতে ব্যর্থ হয়ে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। এর নেপথ্যে আরো অনেকে জড়িত থাকতে পারে। তদন্ত করে দোষীদের খুঁজে বেড় করে উপযুক্ত শাস্তির দাবি তাদের।
নিহতের চাচা মোবারক হোসেন জানান, নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলার নোয়াকান্দি গ্রামের মো. হিরন মিয়ার ২ ছেলে ১ মেয়ের মধ্যে মেঝো নাহিন। পরিবারের সঙ্গে ভাটারা কুড়িলবিশ্বরোড মিয়া বাড়ির ক-১২৬ নম্বর বাসায় থাকতো এবং শেরেবাংলা আইডিয়াল হাই স্কুলের ১ম শ্রেণির ছাত্র ছিলো। বুধবার সকাল ১১টার দিকে স্কুল থেকে বাসায় ফিরে নাহিন। এরপর প্রতিবেশি মশিউর (১৮) ক্রিকেট খেলার কথা বলে নাহিনকে বাইরে নিয়ে যায়। এরপর স্বজনরা তাকে না পেয়ে প¦ার্শবর্তী কয়েকটি মসজিদে মাইকিংও করে। তবুও তার কোন সন্ধ্যান মিলছিলো না। এক পর্যায়ে মশিউরের মা স্বজনদের জানান, নাহিনকে আমার ছেলে মশিউরের সঙ্গেই দেখেছি, ওর সঙ্গেই আছে।
মোবারক হোসেন আরো জানান, বিকেল ৫টার দিকে মশিউর এলাকায় আসে। এসময় তার পড়নের প্যান্ট উল্টো করে পড়া ছিলে। এতে রক্ত মাখা ছাপও দেখে সবার সন্দেহ হলে আটকিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন সে জানান, খেলার সময় আহত এক জনকে ধরে গাড়িতে উঠিয়ে দেওয়ার সময় তার প্যান্টে রক্ত লেগেছে।
পরে ভাটারা থানায় খবর দিলে পুলিশ মশিউরকে থানায় নিয়ে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পর সে নাহিনকে খুন করার কথা স্বীকার করে। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পার্শ্ববর্তী এলাকা বাড্ডার আফতাব নগর ৩ নম্বর সেক্টরের ৩৩ নম্বর প্লটের কাশ বাগান থেকে নাহিনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে লাশটির ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়। নিহতের অপর চাচা শামীম জানান, ৭ বছরের শিশু সঙ্গে মশিউরের ক্রিকেট খেলার দ্বন্দ বিষয়টি মেনে নেয়া যায় না। এর নেপথ্যে অপহরণ-পাচারসহ আরো কারণ থাকতে পারে। সুতরাং মশিউরসহ এর পেছনে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।
বাড্ডা থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, বুধবার রাত ১০টার দিকে ঘাতক মশিউরের তথ্যের ভিত্তিতে আফতাবনগরের ওই কাশ বাগান থেকে নাহিনের লাশ উদ্ধার করা হয়। তার মাথা, শরীরসহ শরীরের অনেক জায়গায় ইট দিয়ে থেতলানো জখম রয়েছে। তাকে ইটদিয়ে থেতলিয়ে মারার কথা মশিউরও স্বীকার করেছে। এই হত্যাকান্ড ঘটনায় নিহতের বাবা একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় মশিউরকে গ্রেফতার দেখিয়ে গতকাল বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় সে। এ ঘটনায় অন্য কোনো কারণ আছে কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখা হবে।